সর্বশেষ আপডেট : ৭ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

অঝোর ধারায় বৃষ্টি : প্রাণ পেয়েছে হাম হাম জলপ্রপাত

সালাহউদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ ::

এখন বর্ষার মৌসুম, অঝোর ধারায় বৃষ্টির সময়। এই সময় বিবেচনা করে কবিগুরু বলেছেন, ‘ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’ কিংবা ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’। কিন্তু এ ধরনের ভাবালুলতায় আচ্ছন্ন থাকা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষের চলে না। বৃষ্টির দিনে যেন তাদের জন্যই নতুন প্রাণ পেয়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের গহীন অরণ্যের দুর্গম এলাকার হাম হাম জলপ্রপাত। স্থানীয় উপজাতিদের ভাষায় হাম হাম কথাটির অর্থ হচ্ছে প্রবল বেগে পানি পড়ার শব্দ।

হাম হাম জলপ্রপাত অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় প্রকৃতিপ্রেমীদের অন্যতম তীর্থস্থান। অত্যন্ত দুর্গম আর গহীন জঙ্গলে অবস্থিত এই জলপ্রপাত পর্যন্ত পৌঁছানোর প্রতি পদে পদে যেমন রয়েছে বিপদের ভয়, তেমনি রয়েছে রোমাঞ্চের হাতছানি। সেই হাতছানিতেই প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে যান হামহাম জলপ্রপাতের কাছে। পাহাড়ের শরীর বেয়ে গড়িয়ে পড়া টলমলে স্বচ্ছ জলের ধারা, গড়িয়ে পড়ছে ১৫০ থেকে ১৬০ ফুট ওপর থেকে। পাহাড়ের ওপর থেকে আছড়ে পড়া স্রোতধারা বয়ে যাচ্ছে সমতলে। চোখ জুড়ানো হামহাম জলপ্রপাত বাড়িয়ে দিয়েছে কমলগঞ্জের পর্যটনের মর্যাদা। জলপ্রপাতটি হয়ে উঠেছে উপজেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান।

২০১০ সালের শেষের দিকে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সঙ্গে দুর্গম জঙ্গলে ঘুরতে যাওয়া একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন হাম হাম জলপ্রপাত। ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের একটি দল সরেজমিনে হাম হাম জলপ্রপাতটি পরিদর্শন করেন। এরপর থেকেই এটি আলোচনায় আসে।

কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ইসলামপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রাজাকান্দি রেঞ্জের ৭ হাজার ৯৭০ একর আয়তনের কুরমা বনবিট এলাকার পশ্চিম দিকে চম্পারায় চা-বাগান। এই কুরমা বনবিটের প্রায় ৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে হাম হাম জলপ্রপাতটির অবস্থান। যা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের প্রায় সীমান্তের নিকটবর্তী। এখানে বর্তমানে সরাসরি পৌঁছানোর কোনো সড়ক নেই।

কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা চত্বর থেকে কুরমা চেকপোস্ট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তায় স্থানীয় বাস/জিপ/মাইক্রোবাসে করে যেতে পারলেও বাকি পথ পাহাড়ি এলাকা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। পায়ে হেঁটে এ রাস্তায় যেতে যেতে চোখ পড়বে চা-বাগানের অপরূপ দৃশ্য। তবে মোটরসাইকেল বা সিএনজিতে করে গেলে আরো ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার ভেতরে সীমান্ত ঘেঁষে ত্রিপুরা আদিবাসীদের পল্লী ও কুরমা বন বিটের অরণ্য ঘেরা দুর্গম পাহাড়ি এলাকা তৈলংবাড়ী পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে মূল জলপ্রপাতের দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। সেখানে যেতে হলে তৈলংবাড়ি বা কলাবন বস্তীর আদিবাসীদের সাহায্য নিলে ভালো হয়। পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু পিচ্ছিল ও সরু পথে ট্রেকিং করতে হয় খুব সর্তকতার সঙ্গে। ট্রেকিংকালে ভারসাম্য রক্ষর্থে বাঁশের লাঠির সাহায্য নিতে হয়। পথে মাকাম নামের বেশ বড় একটা পাহাড়ও পেরোতে হয়। জারুল, চিকরাশি আর কদমের সারিবদ্ধ ডালে পাখি আর প্রজাপতির মেলা, ডুমুরের গাছ আর বেত বাগানে অগুণতি চশমা বানরের দেখা মিলবে। পেরোতে হয় দুর্গম পাহাড়ি সরু পথ। পাহাড়ি ঝিরি ধরে হাঁটতে হয় বহুদূর। কোথাও হাঁটু কিংবা কোমর পানি। জলপ্রপাতের আধা কিলোমিটার দূর থেকেই শোনা যায় ঝর্ণার কুলু কুলু ধ্বনী। শুষ্ক মৌসুমে ঝর্ণার পানি কম থাকে, বর্ষায় নতুন প্রাণ পায় হাম হাম জলপ্রপাত। স্থানীয় উপজাতিদের ভাষায় হাম হাম কথাটির অর্থ হচ্ছে প্রবল বেগে পানি পড়ার শব্দ।

পায়ে হেঁটে জলপ্রপাতটিতে পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। বাংলাদেশে এটিই সবচেয়ে প্রশস্ততম। ক্রমাগত পর্যটক সংখ্যা বাড়ছেই। এরই মধ্যে সরকারি উদ্যোগে অবকাঠামো এবং যোগাযোগের সুবিধা বাড়ছে।

কমলগঞ্জ সদর থেকে গিয়েছেন রোমাঞ্চকর হাম হাম ঝর্ণা দেখতে কলেজ ছাত্র, নয়ন, রিজভী, নাইম, ইমন, ইমরাম, নয়ন ও তুহিন। তারা বলেন, ‘এত সুন্দর একটা যায়গা আমাদের এলাকায় আছে, আমরা জানতাম, তবে কখনো যাইনি। কলাবন থেকে ২ ঘণ্টায় হাম হাম এর মূল জায়গায় যাই। পৌঁছার পর মনটা ভরে গেল।’

জেলা শহর থেকে ঘুরতে আসা শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী জানান, হাম হাম জলপ্রপাত দেখার সবচেয়ে ভালো সময় বর্ষাকাল। ভেতরে প্রবেশ করলেই মনটা ভরে যায়।’

এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন,‘এটি অ্যাডভেঞ্চার প্রকৃতির পর্যটনকেন্দ্র। আপাতত এখানে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে বনের ভেতর যাতায়াতের উন্নয়নের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।’

কিভাবে আসবেন : ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল হয়ে কমলগঞ্জে যেতে হবে। ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পারাবত, জয়ন্তিকা বা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে প্রথমে কমলগঞ্জ আসা যায়। আর বাসে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে ফকিরাপুল অথবা সায়েদাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস, এনা ইত্যাদি এসি ও ননএসি বাস পাওয়া যায়। বাসে করে শ্রীমঙ্গল যেতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। তারপর যেকোনো গাড়ি নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলায়, সেখান থেকে দ্রুত হাম হাম পৌঁছানো যায়।

সতর্কতা : অব্যবহৃত খাবার, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্য আবর্জনা বনের যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। এগুলো সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন এবং বাইরে কোথাও নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলবেন। ট্রেকিং উপযোগী জুতা পরতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: